মাভাবিপ্রবি নিয়ে জাফর ইকবাল স্যারের লেখা, শিক্ষকদের প্রতিবাদ ও ছাত্রদের অভিব্যক্তি

30 May, 2011

আপনারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করলেও আপনারা বেতন পাবেন, না করলেও পাবেন। এ কারনে ৩০০ ছাত্রের ভবিষ্যত নিয়ে আপনাদের কোন মাথাব্যাথা নেই। কেন তারা এই আন্দোলন করছে, তা কি ভেবে দেখেছেন?

যদি সিলেবাসের ১০-১৫% পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীদের একটি যুগোপযোগী আধুনিক ডিগ্রি দেয়া যায়, তাহলে সে যৌক্তিক দাবী তারা করতেই পারে। এ কারনে তাদের নামে বহিষ্কারাদেশ, মধ্যযুগীয় কায়দায় পুলিশি নির্যাতন, গ্রেফতার করতে হবে কেন? ছাত্রদের কি কি কর্মসূচী ছিল তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই জানেন, এই কারনে তাদের বিরূদ্ধে চুরির মামলা দিতে আপনাদের বিবেকে বাধল না। আপনারা কি আপনাদের ছাত্রদের চোর বানাবার শিক্ষা দিচ্ছেন?

জাফর ইকবাল স্যারের লেখার ব্যাপারে আপনারা প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন,

২৫ মে প্রথম আলোয় সাদাসিধে কথায় 'ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমরণ অনশন' শিরোনামের লেখায় শ্রদ্ধেয় মুহম্মদ জাফর ইকবাল মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্কের যে মেরুকরণ করেছেন, তার সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করছি।

জাফর স্যারের ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছু নেই, আমরা সবাই তার ব্যাপারে জানি। জাফর স্যার ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছেন, কিন্তু তা আপনাদের বিপক্ষে গেছে। তাই বলেই তার কথা বিরোধিতা করতে হবে? আপনারা আপনাদের স্বপক্ষে জোরালো যুক্তি দিতে পারেন নি। ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্কের মেরুকরন তো আপনারাই করছেন। তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিচ্ছেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে কেন ডিগ্রি পরিবর্তন করার দাবীর অপরাধে জেলে রাত কাটাতে হবে? ফুড সহ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের ছেলেদের কেন মেস থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে? এসকল প্রশ্নের উত্তর আপনারা কার কাছে দেবেন?

তাদের বিরুদ্ধে আপনারা যে সব অন্যায় আচরন করেছেন তার বর্ণনা দিতে গেলে মহাকাব্য হয়ে যাবে। আগ্রহীরা চাইলে http://www.ftns2fe.webs.com ঠিকানায় বিস্তারিত দেখতে পারেন।

এ তো গেল ফুড ডিপার্টমেন্টের কথা। এই বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের ছেলেদের সাথেও অন্যায় আচরন করেছে। তাদের এ সমস্যার যাতে দ্রুত সমাধান হয় এজন্য মানববন্ধন করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমাদের বলেন,

আপনারা যদি ফুডের ব্যাপারে কোন স্টেপ নেন, তাহলে আমি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেব। এতে আপনাদেরই ক্ষতি। আমার কিছুই হবে না।

বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় মানববন্ধন করার কারনে বন্ধ হয়ে গেছে আমার জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার অযোগ্যতা ঢাকার জন্য বহিষ্কারাদেশ দিয়েই যাচ্ছে। কোন ছাত্র কিছু বলতে চাইলে প্রথমেই তাকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়ে বলা হয়- 'তোমার আইডি কত?'

ছাত্ররা আপনাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বললেই আপনারা তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক পদক্ষেপ নেন। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭০০ ছাত্রের মধ্যে ১ বছরে ৫২ জনের বহিষ্কার। বাংলাদেশের আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রেকর্ড আছে কিনা আমার জানা নেই। এই নোটটার জন্য আমার উপর বহিষ্কারাদেশ চলে এসে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই।আমি অন্য ডিপার্টমেন্টের ছাত্র, আমার এ বিষয় নিয়ে কথা বললে হয়ত সমস্যা হতে পারে, তবুও বিড়ালের গলায় কাউকে না কাউকে ঘণ্টা বাঁধতেই হবে।

ছাত্ররা নানা ভুল ত্রুটি করেছে। আপনারা সেসব কথা মিডিয়ার সামনে জোড় গলায় বলতে পারেন, কিন্তু আপনাদের অযোগ্যতার কথা কি আপনারা একবারও স্বীকার করেছেন?

একবার ভাবুন তো ঐ মায়ের কথা, যে তার সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে পড়াশুনা করার জন্য, কিন্তু সন্তান শিক্ষকদের করা মিথ্যা মামলায় চুরির দায়ে হাজতে রাত কাটাচ্ছে। তার জায়গায় নিজেকে একবার কল্পনা করুন। বিবেকের কাছে কি জবাব দেবেন?

ছাত্ররা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। আপনারা তাদের সেই ক্ষমতাটুকুও কেড়ে নিয়েছেন। ছাত্রদের প্রতি আমার আহ্বান, যেখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু করার থাকে না সেখানে তাকে নাকি ঘৃণা করতে হয়। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে না পারি, তাদেরকে অন্তত সমর্থন না দেই, ঘৃণা করতে শিখি। আমারতো মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিবেক না থাকলেও আমাদের আছে। আমরা বিবেকের এ দায় এড়াব কিভাবে?